* তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন * মামলায় রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি * রাজসাক্ষী’র নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) গঠন করে আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক রয়েছেন। মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাকে উক্ত মামলায় রাজসাক্ষী করা হয়েছে। এরপর তার নিরাপত্তা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন তার আইনজীবী। একই সঙ্গে মামলার সূচনা বক্তব্য প্রদান ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৩ ও ৪ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন; বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ৭ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবারের জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে হাজির হতে বাংলা ও ইংরেজি দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। পরদিন দুটি পত্রিকায় তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এরপরও পলাতক আসামিরা হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি শুরু করেন।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনেন প্রসিকিউশন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ উপস্থাপনের পর গত ১ জুন ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে ৮১ জনকে।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আদালতকে জানান, ‘আই ফিল গিলটি’। যারা এ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চান তিনি। এসময় ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এতে তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ও প্রসিকিউশন। এরপর তার নিরাপত্তা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন তার আইনজীবী।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এর বাইরেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ
শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু
- আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ১০:৪৪:২৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১১-০৭-২০২৫ ১২:৫০:২৩ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ